ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রবাস জীবনে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

মো. মঈন উদ্দিন সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
প্রবাস জীবনে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

শিক্ষা মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি। শিক্ষাই পারে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে, জঞ্জাল থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। প্রবাদ রয়েছে, ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও যাও’। তাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শিক্ষা অর্জনের বিস্তৃতি রয়েছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। 

দেশের পাঠের সমাপ্তি ঘটিয়ে উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীদের অংশ স্বপ্ন দেখেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। আর্থিক সামর্থ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্কলারশিপের উপর ভিত্তি করে ঠিক করা হয় গন্তব্য। সঙ্গে রয়েছে ভাষা দক্ষতা অর্জন, ভিসা প্রসেসিংয়ের মতো বিষয়। এরপর থেকেই শুরু পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে গিয়ে এক নতুন জীবনের অভিজ্ঞতা। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, পরিচিতি তৈরি করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতির সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া, নিজের ব্যক্তিত্ব এবং নেটওয়ার্কিং তৈরি, আবাস এবং খাদ্য ভাবনা, আয়ের পথ তৈরি, একাকিত্বে নিজেকে সামাল দেওয়াসহ নানা বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় প্রবাসে থাকা একজন শিক্ষার্থীকে। অধিকাংশ খাপ না খাওয়াতে পেরে হতাশ হয়ে মাঝ পথেই ফেরত আসতে চান। তবে, যারাই ধৈর্য ধরে বিষয়গুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, তারাই সফলতার মুখ দেখেন।  

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পর মূল ভাবনা শুরু হয় আবাস এবং খাদ্য নিয়ে। ডরমেটরিতে ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করেন কয়েকজন মিলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ দেশীয়রা একত্রে থাকার, যদি তা না মেলে, তাহলে চেষ্টা করেন প্রতিবেশী দেশের শিক্ষার্থীরা মিলে থাকার। এতে পছন্দ-অপছন্দ, ভাষাগত দিক, খাদ্যাভাস অনেক ক্ষেত্রে মানানসই হবার কারণে প্রবাসে টিকে থাকা সহজ হয়ে ওঠে ও একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠা যায়। 

প্রথম দিকে খাবার কিনে খাওয়ার প্রবণতা থাকলেও খরচের কথা চিন্তা করে পরবর্তী সময়ে নিজেরাই বাজার করে ও রান্না করে খেতে অভ্যস্ত হন। প্রতি শিক্ষার্থীকে ৪০-৪৫ শতাংশ খরচ বহন করতে হয় এসবের পিছনেই। তবে দেশ ভেদে খরচের হার ভিন্ন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া। তাছাড়া পছন্দের মধ্যে রয়েছে ইউরোপিয়ান সেনজেনভুক্ত দেশগুলোও। শিক্ষার্থীদের আয়ের ব্যবস্থা দেশ ভেদে ভিন্ন। এশিয়ান দেশগুলোতে পড়ালেখার পাশাপাশি আয়ের সুযোগ তেমন উল্লেখযোগ্য না থাকলেও এশিয়ার বাইরের দেশগুলোতে মুদ্রার মান তারতম্যের কারনে পরিবারের উপর চাপ কমাতে পড়ালেখাসহ অন্যান্য খরচ যোগানো এবং অবসর সময় কাটাতে শিক্ষার্থীরা বেছে নেন রেস্তোরাঁ, সুপারশপ এবং শপিংমলগুলোতে পার্ট-টাইম চাকরি। অনেকে স্থানীয় ভাষা শিখে শুরু করেন দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের ব্যবসা। 

পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে দূরত্বে থাকার খারাপ লাগা থাকলেও শিক্ষাজীবন শেষে চেষ্টা করেন বাকিজীবন ওখানেই থেকে কিছু করার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে করে নেন সবকিছুর প্রতি অভ্যস্ত। জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে সব কিছুতে চলে আসে আমূল পরিবর্তন। অনেকের পরিকল্পনা থাকে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দেশে দেশান্তরিত হওয়ার। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন, বিশুদ্ধ আবহাওয়া, অধিকতর আয়ের পথ ও অন্যান্য সু্যোগ-সুবিধার কারণে প্রবাস জীবনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে বেশি। 

প্রতিটি দেশেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের কমিউনিটি, যারা একে-অপরের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও বাঙালির সংস্কৃতির উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তারা গড়ে তোলেন প্রবাসের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ, যা সংশ্লিষ্ট দেশ ও অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তৈরি করে আগ্রহ, অংশগ্রহণের ইচ্ছা এবং বন্ধুত্বের মেলবন্ধন।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়