ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যেমন ছিলো নবীজির রমজান

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ১৭ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৩:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০২২
যেমন ছিলো নবীজির রমজান

অফুরন্ত কল্যাণ লাভের মাস রজমান। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা অঝোর ধারায় রহমত ও বরকত বর্ষণ করেন। আর নাজাত দান করেন অগণিত বনি আদমকে। সর্বোপরি রমজান হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উপযোগী মাস। মহান আল্লাহর অগণন দয়া ও ক্ষমায় সিক্ত হওয়ার মাস। মহান রবের সান্নিধ্য লাভে আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে যেসব আমল করতেন তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

সাহরি 
সাহরি হলো বরকতময় খাবার। আর রোজার জন্য সাহরি গ্রহণ করা আমাদের প্রিয়নবীরসুন্নত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শেষ প্রহরে সাহরি গ্রহণ করতেন। তিনি তাঁর উম্মতকেও সাহরি গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি গ্রহণ করো, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহবুখারি ওমুসলিম)। 

কাতাদা (রহ.) হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, (একদিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যায়েদ বিন সাবেত রা. একসঙ্গে সাহরি খেলেন, সাহরি শেষ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের) নামাজ পড়তে উঠে গেলেন। (কাতাদা বলেন) আমরা হজরত আনাসরাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাদের সাহরি শেষ করা ও ফজরের নামাজ শুরু করার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কতটুকু ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, ৫০ অথবা ৬০ আয়াত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে।’ (সহিহবুখারি)।

এখানে ৫০-৬০ আয়াত বলতে মধ্যম ধরনের আয়াত, যা তেলাওয়াতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগবে। সে আলোকে রাতের একেবারে শেষ প্রহরে সাহরি খাওয়া ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল। তাই রাতের শেষ প্রহরে সাহরি খাওয়া সুন্নত।

ইফতার
ইফতার গ্রহণ করা প্রিয়নবীর সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্তুমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলম্ব না করে ইফতার করতেন এবং উম্মতদের দ্রুত ইফতার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যতদিন পর্যন্ত (আজানের পর) দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অতএব তোমরা দ্রুত ইফতার করো। কেননা ইহুদিরা ইফতার করতে দেরি করে থাকে।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ) 

খেজুর বা খুরমা দিয়ে ইফতার করা উত্তম। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত খেজুর বা খুরমা দিয়ে ইফতার করতেন। হজরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সা. (মাগরিবের) নামাজের আগে খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, খেজুর না থাকলে খুরমা দিয়ে ইফতার করতেন, তাও না থাকলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।’ (আবু দাউদ ওতিরমিজি)

দান-সদকা
আমাদের প্রিয়নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামছিলেন মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক দানশীল। আর রমজান এলে তাঁর দানের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কল্যাণবহ মুক্ত বায়ুর চেয়ে বেশি দানশীল হতেন।’ (সহিহবুখারি)।

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে প্রত্যেক সাহায্য প্রার্থীকে দান করতেন।’ (শুয়াবুল ইমান)

ইতিকাফ
রমজানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যতম ধারাবাহিক ও গুরুত্বপূর্ণ আমল ছিল ইতিকাফ করা। আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করতেন।’ (সহিহ বুখারি) এমনকি জিহাদের সফরের কারণে এক রমজানে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি, তবে পরবর্তী বছর ২০ দিন ইতিকাফ করে তা পূর্ণ করে নিয়েছেন। এই মর্মে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন,‘নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিনের ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি বিশ দিনের ইতিকাফ করেছিলেন।’ (সহিহ বুখারি) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রিয়নবীর দেখানো পথে রমজান যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়