ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও রোজার অংশ  

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২০ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১২:৫৪, ২০ এপ্রিল ২০২২
দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও রোজার অংশ  

মহিমান্বিত রমজান প্রতিটি রোজাদারের জন্য বিশেষ ফজিলতের মাস। খাওয়া-দাওয়া, আচার-ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংযমের শিক্ষা দেয় রমজান। রমজান মাসের বিশেষত্ব হচ্ছে এ মাস সংযম, শুদ্ধতা, পরিচ্ছন্নতা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম হলো রোজা। রোজাকে আরবিতে সাওম বলে। সিয়াম শব্দটি সাওম শব্দের বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বিরত থাকা, আত্মসংযম, নিবৃত থাকা, অবিরাম প্রচেষ্টা, কঠোর সাধনা, চুপ থাকা, রক্ষা করা, ছেড়ে দেওয়া। পারিভাষিক অর্থে নিয়তসহকারে সুবহে সাদিক হতে মাগরিব পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম সাওম। সাওম বা রোজা ফরজ করার হিকমত হচ্ছে:
১.  রোজার দ্বারা তাকওয়া অর্জিত হয়
২. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করা যায়
৩. অফুরন্ত রহমত লাভ হয়
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
৫. কুপ্রবৃত্তি দূর হয় 
৬. অন্তর পরিশুদ্ধ হয়
৭. শয়তানের আক্রমণ প্রতিহত করার শক্তি অর্জিত হয়
৮. বিপদগ্রস্ত ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়
৯. অতীতের গুণাহর ক্ষমা পাওয়া যায়
১০. শরীর ও মন সুস্থ ও সতেজ হয়

রমজান হলো আত্মসংযম ও ধৈর্যের মাস। রোজাদারকে অনেক বেশি সংযমী হতে হয়। চলতে হয় দৃঢ় ধৈর্য ধারণ করে। কেননা রোজা রেখে মুমিন বান্দাকে চোখ, কান, জিব, হাত, পা ও দৈহিক সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাবতীয় অবৈধ দৃষ্টিপাত থেকে ফিরিয়ে রাখতে হয়। এ সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মন্দ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা শয়তানের একটি বিষমিশ্রিত তির।’ (কানযুল উম্মাল)
যে আল্লাহর ভয়ে এটা বর্জন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ঈমানের এমন নূর প্রদান করেন, যার আস্বাদন সে অন্তরে অনুভব করে।

রোজা রেখে হারাম জিনিস দেখা, নিষিদ্ধ কথা শ্রবণ করা ও অন্যায় কাজ সম্পাদন করা থেকে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অবশ্যই বিরত রাখতে হবে। তবেই রোজার স্বাদ অনুভূত হবে এবং রোজাও প্রাণবন্ত হবে। মাহে রমজানে ত্যাগ ও সংযম সাধনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচটি বিষয় রোজাদারের রোজা বিনষ্ট করে দেয়— মিথ্যা বলা, কূটনামি করা, পশ্চাতে পরনিন্দা করা, মিথ্যা শপথ করা ও খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো।’ 

পাশাপাশি রোজাদারকে খারাপ কথা শ্রবণ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও সংযমী হতে হবে। কেননা যেসব কথা বলা হারাম, সেগুলো শ্রবণ করাও হারাম। এ কারণেই মিথ্যা শ্রবণকারী ও হারাম ভক্ষণকারীদের পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গিবতকারী ও শ্রবণকারী উভয়েই গুনাহের অংশীদার।’ হজরত ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে গিবত করা এবং গিবত শ্রবণ থেকে বারণ করেছেন।’ (সিরাতে আহমাদিয়া)

সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, মাহে রমজান রোজাদারদের অত্যন্ত সংযত ও মার্জিত হতে শিক্ষা দেয়। তাছাড়া পৃথিবীতে যারা সফলকাম হয়েছেন, তারা পানাহারে ও রিপুর চাহিদা মেটাতে সংযমী ছিলেন। মানুষের মধ্যে যেসব কুপ্রবৃত্তি রয়েছে, তা মানুষকে অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাহে রমজানের রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে পশুপ্রবৃত্তি দমন করা এবং ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান হওয়া। বছরের ১১ মাস প্রচুর খাওয়ার পর রমজানের এক মাস কিছুটা কম খেয়ে সংযম সাধনা করলে তেমন অসুবিধা হয় না। যার ইন্দ্রিয় তৃষ্ণা প্রবল তাকে রোজা রাখার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা রমজান হলো আত্মসংযমের মাস। তাছাড়া সারাদিন উপোস থাকা ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়, বরং এর সঙ্গে রোজাদার ব্যক্তির দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সংযম সাধনা করে চলার নামই রোজা। 

মহান আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানে আত্মসংযমী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়