ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইতেকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইবাদত 

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২২ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১১:৪৫, ২২ এপ্রিল ২০২২
ইতেকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইবাদত 

‘ইতেকাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা বা কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতেকাফ বলা হয়- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য এক বিশেষ সময় এবং বিশেষ নিয়মে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ রাখা। 

ইতেকাফ যে কোনো সময় করা যায়। তবে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা সুন্নত। ইতেকাফের মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। ইতেকাফের মূল উদ্দেশ্য, দুনিয়ার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। মৃত্যু পর্যন্ত ইতেকাফের এই ধারা অব্যাহত ছিল। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

ইতেকাফ হলো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের ইবাদত। কেননা টানা ১০ দিন দুনিয়ার সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনা করা হয় ইতেকাফে। মূলত সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদরের পূর্ণ ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা হয়। রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইতেকাফে থাকেন, তার পানাহার, ওঠা-বসা, ঘুমানো জেগে থাকা বরং প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়।

ইতেকাফ একটি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইতেকাফকারী গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে। তাঁর সব নেক আমল এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে থাকে, যেভাবে তিনি নিজে করতেন। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত) অর্থাৎ সে ইতেকাফের বাইরে থাকতে যেসব ভালো কাজ আনজাম দিতো, যা সে ইতেকাফ থাকার কারণে করতে পারছে না, সেসব আমল আগের মতোই লিপিবদ্ধ হতে থাকে।

ইতেকাফের জন্য জরুরি হলো, মুসলমান হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। সুতরাং কাফের এবং মাতাল লোকের ইতেকাফ জায়েজ নেই। নাবালক তবে বুঝ হয়েছে- এমন বাচ্চা যেরূপ নামাজ, রোজা পালন করতে পারে, তেমনি ইতেকাফও করতে পারে। (বাদায়েউস সানায়ে)

নারীরাও ঘরে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে ইতেকাফ করতে পারেন। তবে তার জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হায়েজ ও নেফাস থেকে পাক থাকতে হবে। ওয়াজিব ইতেকাফ এবং সুন্নাত ইতেকাফে শর্ত হলো রোজাদার হতে হবে। যার রোজা হবে না তার ইতেকাফ শুদ্ধ হবে না। তবে নফল ইতেকাফে রোজা আবশ্যক নয়।

পুরুষরা শুধু মসজিদেই ইতেকাফ করতে পারে। ইতেকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদে হারাম, তারপর মসজিদে নববী, তারপর মসজিদে আকসা, এরপর যে কোনো জামে মসজিদ। জামে মসজিদে ইতেকাফ উত্তম। কারণ জুমার জন্য অন্যত্র যেতে হবে না। কিন্তু জামে মসজিদে ইতেকাফ করা জরুরি নয়; বরং যেসব মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়, সে মসজিদে ইতেকাফ করতে পারে। (ফাতাওয়া শামি ২/১২৯)

রমজানুল মুবারকের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফই সুন্নাত। ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতেকাফের সময়। কারণ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নাত ইতেকাফ বলা হয়। আর মান্নতের ইতেকাফ ওয়াজিব। সুন্নাত ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব। তাছাড়া কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে নফল ইতেকাফ বলে। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। তবে সুন্নাত ইতেকাফকারীদের ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগে মসজিদের সীমানায় প্রবেশ করতে হবে। শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নাত পরিত্যাগের গুনাহ হবে। (ফাতাওয়া শামি)

ইতিকাফ অবস্থায় যে কাজগুলো বেশি বেশি করা উচিত
১৷ অধিক পরিমাণে কোরআনুল কারিম  তেলাওয়াত করা
২৷ অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা
৩৷ অধিক পরিমাণে তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা
৪৷ অধিক পরিমাণে তাওবা-ইস্তিফফার করা
৫৷ অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা
(ফাতাওয়া ও মাসায়িল, আহকামুস সিয়াম)

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা
 

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়