ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

করোনাতেও থেমে নেই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৫, ৩ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:১০, ৩ জানুয়ারি ২০২১
করোনাতেও থেমে নেই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ

ফাইল ফটো

করোনা মহামারির কারণে দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে ব‌্যাঘাত ঘটলেও তা একেবারে থেমে থাকেনি। এসব প্রকল্পের মধ্যে রাজধানীর মেট্রোরেল অন্যতম। করোনার মধ্যেও চলছে নির্মাণকাজ। ২০২২ সালের জুনের মধ‌্যে মেট্রোরেল চালু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের মধ্যে ১১ দশমিক ০৪ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। শূন্য দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। ৯টি স্টেশনের উপ-কাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

আরো পড়ুন:

মেট্রোরেল নির্মাণকাজে স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কারও মধ‌্যে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ থাকলে তাদের স্বাস্থ‌্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। গাবতলী কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে ১০ শয্যার এবং উত্তরায় ১৪ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। মেট্রোরেলের শ্রমিকদের মধ‌্যে এখন পর্যন্ত ২৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। 

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সচিব এম এন সিদ্দিক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। অধিকাংশ পিলারের ওপর স্প্যান বসেছে। প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধেই পরিসেবা স্থানান্তর, চেক বোরিং, টেস্ট পাইল, মূল, পাইল, পাইল ক্যাপ, আই গার্ডার, প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং ও পিয়ার হেড নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।’

মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল‌্যাটফরম নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল‌্যাটফরম নির্মাণ শেষ পর্যায়ে আছে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশনের কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন‌্যালিং, টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণকাজ চলমান। মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তা বিবেচনা করে পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালেন্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটি সমাপ্ত হয়েছে। ৭ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট রেললাইন ও ওভারহেড ক্যাটেনারিস সিস্টেম (ওসিএস) স্থাপনের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমআরটি লাইন-৬ বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৪৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সোশ্যাল স্টাডি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। বর্তমানে এ অংশের পরিসেবা স্থানান্তর, চেক বোরিং, ট্রায়াল ট্রেঞ্চ, টেস্ট পাইল ও স্থায়ী বোর্ড পাইল সম্পন্ন হয়েছে। ১০৬টি পিয়ার কলামের মধ্যে ১০৫টি পিয়ার কলাম সম্পন্ন হয়েছে। ২০৩টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ১২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ফার্মগেট স্টেশনের উপ-কাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। ৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ৯০ মিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। এই প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি ৫২ দশমিক ১১ শতাংশ।

সূত্র আরও জানিয়েছে, রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়। বগি নির্মাণের কাজ ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল জাপানে শুরু হয়। যাত্রীবাহী কোচ (কার বডি) নির্মাণের কাজ জাপানে শুরু হয়েছে। মেট্রো ট্রেনের মকআপ গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছেছে।

ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এই রুটে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।

মেট্রোরেল প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

ঢাকা/হাসিবুল/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়