ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুমিল্লায় সড়কে জুবায়ের অনুসারীদের বিক্ষোভ, ৬ কিলোমিটার যানজট

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:৫৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
কুমিল্লায় সড়কে জুবায়ের অনুসারীদের বিক্ষোভ, ৬ কিলোমিটার যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে জুবায়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ

তাবলিগ জামাতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচার দাবিতে কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জুবায়ের অনুসারীরা। 

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় আলেখারচর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এর আগে সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। কুমিল্লার উলামা মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

ঘণ্টাব্যাপী চলা সমাবেশের কারণে মহাসড়কের দুইপাশে অন্তত ছয় কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়।

সড়ক অবরোধ করে সমাবেশে তারা দাবি জানান, রাতের অন্ধকারে সাদের অনুসারীরা নিরীহ তাবলিগ জামাতের সাথীদের হত্যা করেছেন, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। কুমিল্লার জেলার সব মসজিদ থেকে সাদের  অনুসারীদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা আরও দাবি জানান, যে ধারায় ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেভাবে সাদের অনুসারীদেরও নিষিদ্ধ করতে হবে।

এ সময় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী বলেন, ‘‘সাদপন্থিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। আমাদের সঙ্গে হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম ও সাথীরা আছেন। আমরা ইজতেমা মাঠে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’’

পরে জুবায়ের অনুসারীদের বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জড়ো হন। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন তারা। এ সময় স্মারকলিপিতে সাতটি দাবি উল্লেখ করেন তারা।

বিক্ষোভের পরে এক ফেসবুক পোস্টে মুফতি জিলানি লেখেন, ‘‘আমাদের এই বিক্ষোভের কারণে মহাসড়কে যাত্রীদের যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’’ 

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের বিরোধের শুরু ২০১৯ সালে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছিলেন মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা। পরে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকেন। এ সময় মাঠের ভেতর থেকে জুবায়ের অনুসারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। জবাবে সাদের অনুসারীরাও পাল্টা হামলা চালায়।

একপর্যায়ে সাদের অনুসারীরা মাঠে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাসদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

তাবলীগ জামাতের সাদপন্থী মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, “২০ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আমাদের জোড় ইজতেমা শুরুর হওয়ার কথা ছিল। মাঠ প্রস্তুতির জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ মাঠের আশেপাশে রাস্তার পাশে এসে অবস্থান নিচ্ছিলেন। আমাদের এ প্রস্তুতি দেখে জোবায়েরপন্থীরা বাইরে থেকে গাড়ি ভরে গিয়ে আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং আমাদের লোকজন ইজতেমা ময়দানে ঢুকে পড়ে। পরে সেখানে দুই গ্রুপের মধ্যে আবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।’’

মতভেদের কারণে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত হয়। মাঝে কোভিড মহামারির কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধ থাকে। ২০২২ সাল থেকে ফের ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বের আয়োজনে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারও টঙ্গীর তুরাগ তীরে দুই পর্বে হবে তাবলীগ জামাতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা।

আগামী বছর প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ইজতেমায় অংশ নিবেন জুবায়ের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অংশ নিবেন সাদের অনুসারীরা। 

ঢাকা/রুবেল/বকুল 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়