ঢাকা     মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

‘ভালো করে নাচগান করবেন, বকশিশ পাইবেন’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ভালো করে নাচগান করবেন, বকশিশ পাইবেন’

ছবি : লেখক

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : বাংলা একাডেমির বৈশাখি মেলা জমে উঠেছে বেশ। তবে আরো জমে উঠেছে এই মেলার একটি বিশেষ অংশ পুতুল নাচ। সবাই যখন মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে খুঁজে নিচ্ছেন তাদের পছন্দের পণ্যটি, তখনই অন্য একটি দল মাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঝুমুর ঝুমুর পুতুল নাচ দেখার জন্য।

টিনের ছিউনি দেওয়া অস্থায়ী ছোট্ট মঞ্চটার শেষপ্রান্তে ছোট্ট একটু জায়গা করা হয়েছে। লাল কাপড়ের পর্দা টানানো এই জায়গাতেই দেখানো হচ্ছে পুতুল নাচ। মঞ্চের এক প্রান্তে বাজছে ড্রাম, আর তার তালে তালে অন্য প্রান্ত থেকে গান করছেন এবং পুতুলের কথাগুলো অনুবাদ করে দিচ্ছেন সাথী খাতুন।

মূল মঞ্চের সামনে বেশ ভিড়। ছোট্ট একটা দর্শক গ্যালারিতে অন্তত ৩০ জন দর্শক রয়েছে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছে ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ দেখার জন্য।

পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে দর্শক হয়েছে ৬০ বছরের মালতী গুপ্তও। কথা বললে জানালেন, অনেক আগে গ্রামের মেলায় একবার পুতুল নাচ দেখেছিলাম। এখন তো আর এগুলো পাওয়ায় যায় না। প্রচলন উঠে গেছে বললেই চলে। অথচ এক সময় এই পুতুল নাচই ছিল মেলার অন্যতম আয়োজন।

মালতী গুপ্তর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই পর্দা উঠলো মূল মঞ্চের। বেরিয়ে এলো লাল জরির কাপড় পরা একটি মেয়ে পুতুল। কথা বলতে শুরু করলো ‘চিকচিক চিকচিক’ করে। পুতুল ‘চিকচিক’ করে যা বলে, পাশ থেকে তা দর্শকদের জন্য অনুবাদ করে দেন সাথী খাতুন। মঞ্চের কর্ণার থেকে সাথী খাতুন পুতুলকে বলে, ‘ও দিদিমণি, আসরে যখন আইছেন, কিছু নাচ-গান করবেন।’ পুতুল জবাবে বলল, ‘চিকিচিকি।’ মানে, ‘নাচগান করব?’ উত্তরে সাথী বলল, ‘ভালো করে নাচগান করবেন, বকশিশ পাইবেন।’ একথা শুনে পুতুলটি নেচে নেচে গাইতে শুরু করল।

একটির পর একটি নতুন নতুন পুতুলের নাটক। পুতুলদের সাপখেলা, বিয়ের আসর, ভূত খেলা এবং সবশেষে হয় নৌকা বাইচের আয়োজন। তবে বাইচের নৌকা দুটি শেষ মুহূর্তে কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়ে অসময়ে ডুবে যায়।

শুরু হয় পরবর্তী আসরের আয়োজন। মাইকের ঘোষণায় বেরিয়ে যায় সকল দর্শক। তবে তার আগে কথা হয় দলের অরিত্র চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে জানালেন, পুতুল নাচ এখন তো প্রায় বিলুপ্ত। তবে মেলা সহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তারা পুতুল নাচের আয়োজন করে থাকেন।

পুতুল নাচের প্যান্ডেল থেকে বেরিয়েই কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী শারীফ অনির্বানের সঙ্গে। পুতুল নাচ দেখার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বললেন, পুতুল নাচের কথা এর আগে অনেক শুনেছি এবং পড়েছি। তবে কখনো দেখা হয়নি। সেখান থেকেই আগ্রহী হয়ে টিকিট কাটি। প্রথমবারের মতো পুতুল নাচ দেখলাম। এটা তো আমাদের বাঙালিয়ানার অন্যতম উপাদান। আমার এটা খুব ভালো লেগেছে। শহরের এই যান্ত্রিকতার মাঝেও যে বাংলা একাডেমি আমাদের এমন একটি ঐতিহ্যকে সামনে তুলে এনেছে, এজন্য বাংলা একাডেমিকেও ধন্যবাদ জানায়। তবে আমাদের এই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। এছাড়া পুতুল নাচকে টিকিয়ে রাখতে এর আরো বেশি বেশি প্রচারণা এবং আরো বেশি আয়োজন করা উচিত বলেও মনে করেন ঢাবির এই শিক্ষার্থী।

পড়ুন : ‘



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়