গোপালগঞ্জে ৪ হত্যা মামলা, আসামি ৫৪০০
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি হত্যা মামলা করেছে। এসব মামলায় ৫ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরো একটি হত্যা মামলা পরবর্তীতে দায়ের হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলাগুলো হয়। সদর থানার চারজন এসআই মামলাগুলোর বাদী।
রবিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার প্রথম দিন বুধবার (১৬ জুলাই) গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি হত্যা মামলা করেছে। তিনটি মামলায় ১৫০০ জন করে এবং একটি মামলায় ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। চার মামলায় মোট আসামি প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন।
তিনি আরো জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যাওয়ার ঘটনাতেও মামলা হবে।
বুধবার (১৬ জুলাই) নিহত চারজন হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান অটোরিকশা চালক রমজান মুন্সী। নিহত পাঁচজনেরই সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ও সৎকার করা হয়েছে।
ওসি জানান, কিশোর রমজান কাজী হত্যার ঘটনায় মামলার বাদী হয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই আইয়ুব হোসেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এনসিপি নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। তারা গোপালগঞ্জ শহরের এস কে সালেহিয়া মাদরাসার কাছে পৌঁছালে ১৪০০ থেকে ১৫০০ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ দুষ্কৃতকারীরা গাড়িবহরে হামলা চালায়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলাকারীদের বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। স্থানীয়রা তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীপ্ত সাহা (২৭) হত্যা মামলায় বাদী হয়েছেন এসআই শামীম হোসেন। মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতকারীরা (বুধবার) বেলা আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনে দীপ্ত সাহা গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়েছেন সোহেল রানা মোল্লা (৩০) হত্যা মামলায়। সেই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লঞ্চ ঘাট এলাকায় আ্ওয়ামী লীগ ও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে সোহেল রানা আহত হন। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন লঞ্চ ঘাট এলাকার পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগসহ দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে ইমন তালুকদার (১৭) নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে হত্যা মামলায়। সেই মামলার বাদী হয়েছেন এসআই শেখ মিজানুর রহমান।
গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা ভন্ডুল করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শত শত নেতাকর্মি হামলা চালায়। পরে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। দিনভর চলা সংঘর্ষে পাঁচ যুবক নিহত ও পুলিশ সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।
এ ঘটনায় এখন পযর্ন্ত চারটি হত্যা মামলাসহ মোট আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাড়ে ৮ হাজারেরও বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩১০ জনকে।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ