ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

ভালো সাবজেক্ট নাকি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় 

মুহম্মদ সজীব প্রধান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ১৫ নভেম্বর ২০২১  
ভালো সাবজেক্ট নাকি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় 

ভাইয়া, ভালো সাবজেক্ট নাকি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়? এ প্রশ্নটি ভর্তি পরীক্ষার্থীদের নিকট খুবই সাধারণ। তবে এ সাধারণ প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পেলে অনেক স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খান। আর আমাদের দেশে ভালো সাবজেক্ট এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের হতভম্ব করে দেয়। 

করোনা মহামারির কারণে এবারের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বেশ কিছু পার্থক্য তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। যদিও বরাবরের মতো এ বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। তার মানে, যারা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদের লক্ষ্যই ছিল এগুলোতে পড়ার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এবছর প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে হয়েছে, যাকে আমরা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বলছি। গুচ্ছ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক পরীক্ষার্থী ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনটিতে ভর্তি হবেন এবং কোন সাবজেক্টে ভর্তি হবেন সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে  রয়েছন।

প্রথমত ভালো বিশ্ববিদ্যালয় এবং খারাপ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া যাক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমরা কী বুঝি? যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকবেন, যারা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পিপাসা নিবারণে নিবেদিত হবেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে গবেষণাসহ অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ থাকবে, শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা থাকবে, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও আধুনিক গবেষণাগার থাকবে এবং অসুস্থ রাজনীতি মুক্ত হবে। বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে, তাহলে আমরা সেটাকেই ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করি। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই একই মানের, যদিও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে, সেটা আকাশ পাতাল পার্থক্য নয়। 

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক সঙ্কট, আবাসিক সমস্যা, গ্রন্থাগারে বইয়ের অভাব, অনুন্নত গবেষণাগার এবং অসুস্থ রাজনীতি চর্চার দৃশ্য আমরা সবাই জানি। আর এসব বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের পড়াশোনা করতে হবে এবং ভালো করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা কোথায় পড়ি সেটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কী জানি। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েরই বয়স ১৫-২০ বছরের মধ্যে আর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র প্রায় একই রকম। তবে অবস্থান ভেদে অনেকেই ভালোমন্দ বিচার করে থাকেন৷ যেমন একজন ভর্তি পরীক্ষার্থী যার বাড়ি যশোর, সে স্বভাবতই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইবে, আবার যার বাড়ি কুমিল্লা সে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। 

এদিকে, শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি ভয়ঙ্কর ধারণা ঘুরপাক খায়, সেটা হলো কোন বিশ্ববিদ্যালয় আয়তনে কত বড়, সে পরিমাপ দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোমন্দ বিচার করেন, যা একদম ভুল। বুয়েটের আয়তন ৭৬.৮৫ একর, যা অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন থেকে অনেক ছোট। তাই বলে কি বুয়েটের গুরুত্ব কমে যাবে? মনে রাখতে হবে, আয়তনে বড় ক্যাম্পাস আমাদের বড় করবে না এবং ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আমাদের সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ে দেবে না বরং আমাদের প্রচেষ্টা ও জ্ঞান সাধনাই বড় করবে এবং সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করবে।

ভালো সাবজেক্ট এবং খারাপ সাবজেক্ট নিয়ে কিছু জরুরি কথা বলি। আমরা মনে করি মানবিক বিভাগের ভালো সাবজেক্ট মানেই আইন, অর্থনীতি, ইংরেজি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; বিজ্ঞান বিভাগের ভালো সাবজেক্ট মানেই সিএসই, ফার্মেসি, ইইই এবং জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং; ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ভালো সবজেক্ট মানেই অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স ব্যাংকিং। এসব সাবজেক্টে পড়তে পারলে জীবন আলোকিত হয়ে যাবে আর অন্যান্য সাবজেক্ট পড়লে ভবিষ্যত অন্ধকার। এমন ভাবনা হাস্যকর ও অযৌক্তিক। 

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে নিজ সাবজেক্টে পড়ে ওই রিলেটেড কর্মক্ষেত্রে ক্যারিয়ার সাজিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। মেডিক্যালে কিংবা সিএসই পড়ে অনেকেই বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ হচ্ছে, অনেকে ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করে ব্যাংকে চাকরি করছে আবার অনেকে ফিন্যান্স ব্যাংকিংয়ে পড়ে উদ্যোক্তা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সাবজেক্টে পড়াশোনা করে পরবর্তী পরিস্থিতি অনুযায়ী এটা রদবদল হতে পারে। তবে কারো যদি একান্তই কোনো সাবজেক্টের প্রতি ভালোবাসা থাকে, তাহলে আমি বলবো ওই সাবজেক্টেই পড়ার জন্য। ভালো লাগে না এমন কোনো সাবজেক্টে পড়লে অনার্সের চার বছর পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারবে না, ফলে ফলাফল খারাপ আসবে। তবে এক্ষেত্রে পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার আগে ওই সাবজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। ওই সাবজেক্টের ভবিষ্যত সম্পর্কেও জানাটা জরুরি। 

যে সাবজেক্টেই আমরা পড়াশোনা করি না কেন, দিন শেষে একটি চাকরিই আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলাদেশে চাকরি পরীক্ষার প্রশ্ন এমনভাবে করা হয়, যা কোনো নির্দিষ্ট সাবজেক্টকে গুরুত্ব দেয় না। বরং এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়, যা যেকোনো সাবজেক্টে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীই উত্তর করতে পারবেন অর্থাৎ চাকরির ক্ষেত্রে সব সাবজেক্টই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই যারা ভালো সাবজেক্ট এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগছেন, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আপনার জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন। 

পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও আবেদন করুন। তারপর যদি পছন্দের সাবজেক্ট না আসে, তাহলে একদমই মন খারাপ করা যাবে না। যে সাবজেক্ট পাবেন, সেটাই ভালোবেসে পড়তে পারলে এবং অন্যান্য স্কিল ইমপ্রুভ করতে পারলে একটি স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন বলে আমি আশাবাদী।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়