ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ওজন কমাতে গিয়ে জ্যাভেলিনে, তারপর ইতিহাস

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৭ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ২২:৫৪, ৭ আগস্ট ২০২১
ওজন কমাতে গিয়ে জ্যাভেলিনে, তারপর ইতিহাস

২০০৮ সালে অভিনব বিন্দ্রার হাত ধরে অলিম্পিকে প্রথম স্বর্ণ জিতেছিল ভারত। তার তিন বছর পরই কিন্তু তৈরি হচ্ছিলেন দেশের আরেক ইতিহাস স্রষ্টা। বলা হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী নীরাজ চোপড়ার কথা। ২০১১ সালে ১৪ বছরের ছেলেটি বাবা-মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন। কারণ দাদীর অতি আদরে ভোজনরসিক নীরাজের অতিরিক্ত ওজন! ওই সময়ই তার ওজন ৮৫ কেজি। শুরু হলো ওজন কমানোর লড়াই। সেটা করতে গিয়ে মন কাড়ল জ্যাভেলিন, সেই ইভেন্ট দিয়েই দেশকে অ্যাথলেটিকস থেকে এনে দেন প্রথম স্বর্ণ।

সন্তানের স্থুলতায় ভয় পাচ্ছিলেন নীরাজের বাবা-মা। পুরো পরিবার তাকে জিমে পাঠানোর জন্য হুরহাঙ্গামা বাধিয়ে দেয়। কিন্তু হরিয়ানার খান্দ্রা গ্রামে ওই ধরনের কোনো সুযোগ সুবিধা ছিল না। বাড়ি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পানিপথের একটি জিমে যান নীরাজ। ফেরার পথে প্রায় সময় শিবাজি স্টেডিয়ামে ঢুঁ মারতেন, যেখানে অ্যাথলেটরা বিভিন্ন ডিসিপ্লিন ও খেলায় মেতে থাকত।

আরো পড়ুন:

নীরাজ বলেন সেই কথা, ‘আমার পকেট মানি ছিল ৩০ রুপি। অনেক দিন এক গ্লাস জুশ কেনারও রুপি ছিল না। ১৭ কিলোমিটার বাসে চড়ে ওই স্টেডিয়ামে যেতাম এবং পানিপথ শহরে কাজ করা এক কাকার সঙ্গে ফিরে আসতাম।’

ওই স্টেডিয়ামে উঁকি মারার মধ্যেই জ্যাভলিনে চোখ পড়ে নীরাজের। দেখা করেন তখনকার পেশাদার জ্যাভেলিন থ্রোয়ার জয়বীর অব বিঞ্জলের সঙ্গে। নীরাজ বলেন, ‘ওজন কমানোর জন্য আমি দৌড়ালেও তা উপভোগ্য ছিল না। আমি প্রায় সময় একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম জয়বীরকে, যিনি ওইসময় জ্যাভেলিনে হরিয়ানার প্রতিনিধিত্ব করতেন। একদিন তার অনুমতি নিয়ে জ্যাভেলিন থ্রোয়ের চেষ্টা করলাম। আবিষ্কার করলাম এটা অনেক দূর ছুড়তে পারি এবং সেই উপলব্ধি আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করল।’

ওজন কমানোর লড়াই করতে গিয়ে নিজের প্রতিভা খুঁজে পান নীরাজ এবং জয়বীরের পরামর্শে ট্রেনিং শুরু করেন। সেই শুরু। ২০১২ সালে লক্ষ্ণৌতে প্রথম জুনিয়র জাতীয় স্বর্ণ জেতেন নীরাজ। গুরুত্ব দিয়ে অনুশীলন শুরুর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই সাফল্য তাকে আরো উজ্জীবিত করে। ৬৮.৪৬ মিটার থ্রোয়ে জাতীয় রেকর্ডও ভেঙে দেন তিনি।

তারপর এলো আকস্মিক চোট। কব্জি ফেটে যাওয়ায় ছয় মাস অনুশীলন করতে পারেননি, ‘আমি ভাবলাম আমার ক্যারিয়ার শেষ। ইনজুরি পেয়েছিলাম থ্রো করার হাতে। ভালো খাদ্যাভ্যাস আর শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে আমার ওজন দুই মাসে ৮২ থেকে ৯৩ কেজি হয়ে গেল।’

কিন্তু হাল ছাড়েননি। দিনে তিনবার করে ট্রেনিং করতেন। চার মাসের মধ্যে ওজন ৮৩ কেজিতে নেন। ২০১৫ সালে পাতিয়ালায় একটি জাতীয় ইভেন্টে ৮০ মিটারের মার্ক অতিক্রম করেন। দেশের অন্যতম সেরা হিসেবে ২০১৬ সালে এশিয়ান জুনিয়র অ্যাথলেটিকস মিটে জায়গা হয়, জেতেন রৌপ্য। হতাশ হন।

ওই বছরই অনূর্ধ্ব-২০ অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে তাক লাগান নীরাজ। জুনিয়রে ৮৬.৪৮ মিটারে ভেঙেছেন বিশ্ব রেকর্ড। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালের কমনমওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান গেমসে সোনা জেতেন। এশিয়াডে ৮৮.০৬ মিটারে জাতীয় রেকর্ড গড়েন।

গত বছরের জানুয়ারিতে ফেরেন থ্রো করা হাতের কনুইয়ের অস্ত্রোপচার করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এসিএনই লিগ মিটিংয়ে ৮৭.৮৬ মিটার থ্রো করে টোকিও অলিম্পিকের জন্য চূড়ান্ত হন।

পাঁচ বছর আগে ইন্ডিয়ান আর্মিতে জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার হন নীরাজ, পদবী ছিল নাইব সুবেদার। এখন পদোন্নতি পেয়ে তিনি সুবেদার। এই সুবেদারই অলিম্পিকের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দুর্দান্ত পারফর্ম করে শুধু নিজের নামই ইতিহাসের পাতায় লিখলেন না, অলিম্পিক স্বর্ণ পদক জয়ী হিসেবে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

একই সঙ্গে তিন বছর পর প্যারিস অলিম্পিকে যখন অংশ নেবেন নীরাজ, তখনও ভারতের প্রত্যাশা থাকবে তাকে নিয়ে।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়