ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মাহে রমজানে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তুলুন

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ২ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৪:০৯, ২ এপ্রিল ২০২৪
মাহে রমজানে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তুলুন

রাত মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ এক নেয়ামত। দিনের আলোয় মানুষ কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে যায়। রাতের অন্ধকার সেই ক্লান্তি দূর করে শরীর ও মন সতেজ এবং চাঙ্গা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আমি রাতকে বানিয়েছি ক্লান্তি দূরকারী (সূরা নাবা, আয়াত ১০)

প্রিয় পাঠক! রাত যখন গভীর হয়, চারদিক নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়, কোলাহলে মুখরিত জনবসতিতে যখন নেমে আসে নীরব নিস্তব্ধতা, বনের পশুপাখিরাও ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন তাদের গৃহের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়, মহান রাব্বুল আলামিন তখন তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য রহমতের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন। প্রিয় পাঠক! গভীর রাতে মানুষ মূলত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। 

আরো পড়ুন:

প্রথমভাগ রাতের অন্ধকারকে মোক্ষম সুযোগ মনে করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরে। দ্বিতীয়ভাগ পূর্ণ রজনী ঘুমের ঘোরে কাটিয়ে দেয়। তৃতীয়ভাগ রাতের অন্ধকার ও নীরবতাকে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের বিশেষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান প্রভুর সঙ্গে প্রেমের আলাপনে মশগুল হন। ইসলামের পরিভাষায় এই নামাজকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। 

প্রিয়নবী (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও স্রষ্টার সান্নিধ্যপ্রাপ্ত মহা মনীষীগণ রাতের শেষাংশকে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, যিকির ও দু’আর মাধ্যমে কাটাতেন।

যে সব পূণ্যবান বান্দা গভীর রজনীতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান স্রষ্টার আনুগত্যে মশগুল হয়, মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে তাদের প্রশংসা করে বলেন, যে ব্যক্তি গভীর রজনীতে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদতে মশগুল হয়, পরকালের আশঙ্কা রাখে এবং তার পালনকর্তার অনুগ্রহ কামনা করে, সে কি তার সমান যে এরূপ করে না? আপনি বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। (সূরা যুমার, আয়াত-৯) 

মহান আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন, তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয় ও আশা নিয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। (সুরা সিজদাহ, আয়াত-১৬)

হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা অবশ্যই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো। এটা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের তরীকা। এর দ্বারা স্বীয় রবের নৈকট্য লাভ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। (মুসতাদরাকে হাকেম)

হযরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, জান্নাতে এরূপ বালাখানা আছে, যার ভিতরের অংশ বাহির থেকে এবং বাহিরের অংশ ভিতর থেকে দেখা যায়। আল্লাহ তায়ালা এই বালাখানাকে ঐ সকল লোকদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা লোকদের খানা খাওয়ায়, অধিক পরিমাণে সালাম দেয় এবং এমন গভীর রজনীতে নামাজ পড়ে যখন লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। (ইবনে হিব্বান) 

সম্মানিত পাঠক! রমজানুল মোবারকে তাহাজ্জুদ নামাজের আমল করা অধিক সহজ। কেননা মাহে রমজানের রোজা পালনের নিমিত্তে সাহরির সুন্নত আদায়ের জন্য আমাদের যে সময় জাগ্রত হতে হয়, সেটাই তাহাজ্জুদের সময়। সুতরাং সাহরির পূর্বে বা পরে কিছু নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রতিটি মুমিনের জন্য অধিকতর কল্যাণকর। তাই রমজানে তাহাজ্জুদের সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ। গভীর রজনী বা রাতের শেষাংশ রাব্বুল আলামিনের নিকট বিশেষ রহমতের সময় হিসেবে বিবেচিত। এই সময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমত পিয়াসী মুমিন বান্দাদের জন্য রহমতের চাদর বিছিয়ে দেন এবং মাগফিরাতের হাত প্রসারিত করেন। তাই রহমতের সময় মহান রহমানকে স্মরণ করা, তাঁর পবিত্রতা ও গুণগান বর্ণনা করা এবং তাঁর কুদরতি কদমে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে মাগফিরাত কামনা করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য বাঞ্ছনীয়।

লেখক : মুফাস্সিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়